টেনিস চ্যাম্পিয়ন জারিফ মান বাড়াতে আমেরিকায়
স্পোর্টস ডেস্ক
আপলোড সময় :
০৩-০১-২০২৫ ১১:০৫:৪২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৩-০১-২০২৫ ১১:০৫:৪২ অপরাহ্ন
টেনিস চ্যাম্পিয়ন জারিফ মান বাড়াতে আমেরিকায় বিজয় দিবস টেনিস টুর্নামেন্টের পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জারিফ আবরার। বয়স মাত্র ১৭। এই বয়সেই বাংলাদেশ টেনিসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন জারিফ। যিনি গত বছরের নভেম্বরে বাহরাইনে অনুষ্ঠিত ডেভিস কাপে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফর্মারও।
ফুটবল, ক্রিকেটের রমরমা সময়ে জারিফের চোখেমুখে শুধু টেনিসের স্বপ্ন। ফ্লোরিডায় টেনিস খেলার পাশাপাশি পড়াশোনা করছেন। আজ (শুক্রবার) বিজয় দিবস টুর্নামেন্টে পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় সবাই উচ্চ শিক্ষার জন্য গেলেও আমি মূলত টেনিসে উন্নতি করতে গিয়েছি। টেনিসই আমার মূল লক্ষ্য, পড়াশোনাটা পাশাপাশি বলতে পারেন।’বিশ্বের অন্যতম সেরা কোচদের একজন অ্যালেক্স। তার বাসাতেই থাকছেন জারিফ। এমন সুযোগ পাওয়ায় বেশ তৃপ্ত বাংলাদেশের এই টেনিস খেলোয়াড়, ‘আমি বড় টেনিস খেলোয়াড় হতে চাই।
এজন্য আমেরিকার ফ্লোরিডায় হোপস এন্ড পারফরম্যান্স একাডেমিতে রয়েছি। সেই একাডেমির কোচ অ্যালেক্সের তত্ত্বাবধানে আছি। যিনি অত্যন্ত বড় মাপের কোচ। তিনি আমাকে বেশ সান্নিধ্য দিয়েছেন, যা বড় পাওয়াই।’ জারিফ আমেরিকায় গিয়েছেন মাস নয়েক আগে। সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন ডেভিস কাপের ট্রায়ালে। বাহরাইনে ডেভিস কাপ খেলে আবার দেশে ফিরেছেন। বিজয় দিবস টুর্নামেন্ট হওয়ায় এটা খেলেই পরবর্তীতে আমেরিকায় ফিরতে চান, ‘আমেরিকায় এই সময় ছুটি থাকে। তাই এখানে টুর্নামেন্ট হওয়ায় খেললাম।
ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে ফ্লোরিডায় পৌঁছাব।’আমেরিকায় পড়াশোনা ও খেলাধুলার প্রশিক্ষণ বেশ ব্যয়বহুল। সেখানে তাই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি জারিফ। নয় মাসের মধ্যে তিন মাস কিছুটা পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন। বাকি ছয় মাস তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত মেজর সাজমুল হককেই খরচ বহন করতে হয়েছে। তাই আমেরিকায় বাকি দিনের পথচলা নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত জারিফ, ‘বাবার জন্য একটু কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটু পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বড় টেনিস খেলোয়াড় হওয়ার জন্য ভালো হতো।’জারিফের বাবা সাজমুল বেশ টেনিস প্রেমিক। আজ স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে এসেছিলেন ছেলের খেলা দেখতে। ছেলের স্বপ্ন বাস্তবায়নে শতভাগ চেষ্টা থাকছে তার, ‘জারিফের টেনিসের আগ্রহ অনেক এবং ইতোমধ্যে নিজেকে প্রমাণও করেছে।
সে সময়ের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকে। যখন বয়স বারো তখন সে ১৪ ক্যাটাগরিতে খেলেছে। বর্তমানে ১৭ বছর হলেও আঠারো ক্যাটাগরিতে খেলেনি নতুনদের উঠে আসার জন্য। ওর বড় মাপের খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাবা হিসেবে আমার দায়িত্ব সেটা পূর্ণতা দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করার।’জারিফের টেনিসে আসার পেছনে বাবা সাজমুলের আগ্রহ ও অবদানও রয়েছে। সাজমুলের যশোরে পোস্টিং থাকাবস্থায় ক্যান্টনমেন্টে বাস্কেটবল–ফুটবলের পাশাপাশি টেনিস খেলেছেন জারিফ। তার বাবা আবার তাদের নিজস্ব টুর্নামেন্টে টেনিসে চ্যাম্পিয়ন হতেন।
সেই থেকে জারিফের টেনিসে বাড়তি টান। পাশাপাশি তার বাবার একটি আলাদা ভিশনও ছিল, ‘অবশ্যই ফুটবল–ক্রিকেট জনপ্রিয় এবং অনেক খ্যাতির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ইন্ডিভিজুয়াল স্পোর্টসে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার অনেক বড় জায়গা রয়েছে। সারা বিশ্বে সার্বিয়াকে মানুষ চেনে ফুটবলের চেয়ে (নোভাক) জোকোভিচের জন্য।’জারিফের টেনিসের হাতেখড়ি বিকেএসপির কোচ টিংকুর কাছে, ‘যশোর ক্যান্টনমেন্টের পরিবেশ আমাকে টেনিসে আকৃষ্ট করলেও টিংকু স্যারের ট্রেনিং আমাকে টেনিসের প্রকৃত স্বাদ দিয়েছে। তার কাছ থেকেই আমি পেশাদার টেনিস খেলা শিখেছি ছোট বয়সেই।’ জারিফকে নিয়ে সম্ভাবনা দেখছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ কারেন। তার পর্যবেক্ষণ, ‘সে ইতোমধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে। নিজেকে আরও উন্নতির জন্য এখন আমেরিকায় অনুশীলন করছে। তার পরিবারও অনেক আন্তরিক।
এই ধারাবাহিকতা থাকলে অবশ্যই বাংলাদেশের টেনিসে তার আরও অবদান রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।’ বিজয় দিবস টুর্নামেন্টে বয়সভিত্তিক দুই পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বিকেএসপির শিক্ষার্থী কাব্য গায়েন। জারিফের গুণে তিনিও মুগ্ধ, ‘জারিফ ভাই অত্যন্ত ভালো মাপের খেলোয়াড়। তার থেকে আমার অনেক কিছুই শেখার রয়েছে।’ বিজয় দিবস টুর্নামেন্টে পুরুষ এককে আর্মি অফিসার্স ক্লাবের জারিফ আবরার, দ্বৈতে আমেরিকান ক্লাবের মো. রুস্তম আলী ও মিলন হোসেন জুটি, মহিলা এককে বিকেএসপির হালিমা জাহান এবং দ্বৈতে ঝালকাঠি টেনিস ক্লাবের সুস্মিতা সেন ও সুমাইয়া আক্তার জুটি চ্যাম্পিয়ন হয়। বালক এককের অনূর্ধ্ব-১৮ ও ১৪ বিভাগে বিকেএসপির কাব্য গায়েন, বালিকা একক অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগে বিকেএসপির হালিমা জাহান, বালিকা একক অ-১৪ বিভাগে মাদারীপুর টেনিস ক্লাবের জান্নাত হাওলাদার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
প্রতিযোগিতায় মোট ৮টি ইভেন্ট ৩০টি ক্লাব/সংস্থা থেকে ২১০ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেছে। প্রতিযোগিতায় মোট ৩ লাখ ৩১ হাজার প্রাইজমানি এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। ফাইনাল শেষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী প্রধান অতিথি হিসেবে পুরষ্কার প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন– বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুল হাই সরকার, সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ (কারেন), স্পন্সর প্রতিষ্ঠান শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV
কমেন্ট বক্স